ইন্টারনেট কাকে বলে? ইন্টারনেট কত প্রকার? সুবিধা ও অসুবিধা

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা

ইন্টারনেট কী? (Internet)

ইন্টারনেট কী?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ছাড়া এক মূহূর্ত চলে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা আমাদের Facebook, Twitter, WhatsApp সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Check করি। আপনি কি জানেন, এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে চলে? আপনি এক কথায় উত্তর দিবেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

আমরা মোটামোটি সকলেই ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত। ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন কাজের সাথে জড়িত। তবে, আমরা হয়ত এটা জানিনা, ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে, ইন্টারনেট কত প্রকার ও কী কী? ইন্টারনেটের জনক কে? ইত্যাদি। আজকের পোস্টে আমরা এসব নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করি।

 

ইন্টারনেট কাকে বলে? (What is internet?)

বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার নাম ইন্টারনেট (Internet) । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা নেটওয়ার্কগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থাই ইন্টারনেট।

ইন্টারনেটকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্ক হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কারণ সারা পৃথিবীকে গ্লোবাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ইন্টারনেট সক্ষম হয়েছে। সেজন্য ইন্টারনেটকে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটওয়ার্ক নামেও ডাকা হয়।

আরও পড়ুন:

কম্পিউটার কাকে বলে? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার

কৃত্রিম উপগ্রহ কি বা কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের প্রকারভেদ ও ব্যবহার

ইন্টারনেটের উপাদান (Elements of the Internet)

ইন্টারনেটের উপাদান হলো User বা ব্যবহারকারী, তথ্য, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পিউটার ইত্যাদি।

ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি?

ইন্টারনেট বা Internet এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Interconnected network (ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক)।

ইন্টারনেট শব্দটি ২টি শব্দ নিয়ে গঠিত। Inter শব্দের অর্থ ভেতরে এবং net শব্দের অর্থ জাল। সুতরাং, Internet শব্দের অর্থ দাড়ায় ভেতরের জাল বা অন্তর্জাল। সেজন্য বাংলায় Internet কে অন্তর্জাল নামে ডাকা হয়। Internet কে সংক্ষেপে Net বলে ডাকা হয়।

 

ইন্টারনেট আবিষ্কার এর ইতিহাস

ইন্টারনেট ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট এর যাত্রা শুরু হয়।

১৯৬৯ সালে ১৪ ই জানুয়ারি ক্যালোফোনিয়ায় যোগাযোগের জন্য একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার তৈরি করা হয়। এটা মূলত মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের গবেষণাকারীরা তৈরি করেছিলেন। শুরুতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির নাম ছিলো “আর্পানেট” (ARPANET)।

“আর্পানেট” (ARPANET) আবিষ্কারের উদ্দেশ্য ছিলো ” নিউক্লিয়ার ইবেন্ট”- এর সহায়তায় আমেরিকার সামরিক বাহিনী ও সরকারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে স্থাপিত “আর্পানেট” (ARPANET) নামক নেটওয়ার্ক সিস্টেমটি পরবর্তীতে ১৯৭৪ ইন্টারনেট নাম ধারণ করে।

আসলে ইন্টারনেট এক দুই দিনে আবিষ্কার হয়নি। সেজন্য নির্দিষ্ট করে ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার সময় উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে, আবিষ্কারের পর ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ব্যবস্থার সম্প্রসারণ হতে থাকে। ১৯৯০ সালের দিকে Internet service provider এর আবির্ভাব ঘটে। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ে Internet বাণিজ্যিক রূপ নেয়।

আরও পড়ুন:

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল ও কুফল  

ভিডিও কনফারেন্সিং কি? ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা

ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি?

ইন্টারনেট মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পূর্বে যে কাজ দিনের পর দিন সময় লাগতো, ইন্টারনেট আসার পর তা নিমিষেই হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট অনেক প্রকারের হতে পারে।

তবে, ইন্টারনেটকে প্রধানত ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • ডায়াল –আপ (Dial-up Internet).
  • ডি এস এল (Digital Subscriber Line Internet).
  • স্যাটেলাইট (Satellite Internet).
  • ক্যাবল (Cable Internet).
  • ওয়ারলেস (Wireless Internet).
  • সেলুলার (Cellular Network Internet).

 

ডায়াল –আপ (Dial-up Internet)

সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড ফোন লাইন থেকে যে ধরণের ইন্টারনেট সংযোগ (Internet connection) পাওয়া যায় তাকে ডায়াল-আপ বলে। এটি ধীর গতির হওয়ায় খুব বেশি জনপ্রিয় না। সাধারণত এ প্রক্রিয়ায় ১০ সেকেন্ডের মধ্যে মোবাইলে কানেকশন শুরু হয়।

ডি এস এল (Digital Subscriber Line Internet)

ডায়াল আপ এর ধীরগতির জন্য বাজারে আসে ডি এস এল। যা ডায়াল আপ থেকে ১০০ গুণ গতিসম্পন্ন।

স্যাটেলাইট (Satellite Internet)

দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ হলো স্যাটেলাইট। এর মাধ্যমে দ্রুতগতিতে তারহীন ইন্টারনেট পরিসেবা দেওয়া সক্ষম হয়েছে।

ক্যাবল (Cable Internet)

ব্রডব্যান্ড লাইনের মাধ্যমে কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন দেওয়ার মাধ্যম হলো ক্যাবল। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে এটি খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম।

ওয়ারলেস (Wireless Internet)

দুটো ডিভাইস পরস্পর কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান করে তার বিহীন একে অপরের সাথে যে মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে তাকে ওয়ারলেস বলে।

সেলুলার (Cellular Network Internet)

মোবাইল ফোন যে ইন্টারনেট (Internet) ব্যবহার করা হয় তার নাম সেলুলার। এটি খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম।

আরও পড়ুন:

প্লেজারিজম কি বা কাকে বলে? প্লেজারিজমের প্রকারভেদ ও ধরার কৌশল

ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of using Internet)

ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হলো:

  • ইন্টারনেট হলো বিশাল তথ্যের ভাণ্ডার। এমন কোন তথ্য নেই যা ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না। যে কেউ কোন কোন সময় কে কোন জায়গা থেকে এই ভাণ্ডার থেকে তথ্য নিতে পারে। শুধু কাঙ্ক্ষিত তথ্যের নাম লিখে র্সাচ দিলেও তথ্য চলে আসে।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে মূহুর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রাপ্তে খবর নেওয়া যায়।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়।
  • VOIP এর মাধ্যমে খুব কম খরচে বিশ্বের যে কোন জায়গায় কথা বলা যায়।
  • ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই টিভি ও রেডিও দেখা ও শোনা যায়।
  • ইন্টারনেট থেকে পছন্দ মতো যে কোন ধরনের সফটওয়্যার, বিনোদন উপকরণ ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যায় ।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে সংবাদপত্র পড়া যায়।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-কমার্সের সাহায্যে ঘরে বসেই পণ্য কেনা ও বিক্রি করা যায়।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে বসে খাবার অর্ডার দেওয়া যায়।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে বিমান, রেল তথা গাড়ির টিকিট ক্রয় করা যায়।
  • ঘরে বসেই বিশ্বের নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় ।
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নেয়া যায়।
  • গুগল ম্যাপ এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন স্থানের স্যাটেলাইট মানচিত্র দেখে ওই স্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ যায়।

 

ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধা (disadvantage of using Internet)

  • বানিজ্যের ক্ষেত্রে সেবার মানের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হওয়া যায়না।
  • মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যহানী ঘটে।
  • কম্পিউটার হ্যাকিং, ভাইরাস বা ম্যালওয়ার সংক্রমণ, স্প্যামিং ইত্যাদি আক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
  • ইন্টারনেটে অনলাইন গেমস,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাহীন আড্ডা ইত্যাদির ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনোযোগ ও সময় নষ্ট হয়।

######

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button