ঈমান কাকে বলে? কোন কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয়? ঈমান ও ইসলামের সম্পর্ক
ঈমানের গুরুত্ব ও ঈমানের ফজিলত
ঈমান
ঈমান কী?
ইসলামের মূলস্তম্ভ বা ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটি। ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি বা স্তম্ভের মধ্যে সর্বপ্রথম হচেছ ঈমান। ইসলামের বাকী স্তম্ভগুলোতে যেতে হলে প্রথমে এ ধাপটি অতিক্রম করতে হবে। ঈমান ব্যতীত কোন আমল কখনো কবুল হয়না।
আজকের এই পোস্টের মাধ্যেমে ঈমান কাকে বলে? কোন কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয়? ইসলামের মধ্যে ইমানের সম্পর্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…
ঈমান কাকে বলে?
ঈমান একটি আররি শব্দ। এর অর্থ—বিশ্বাস করা, আনুগত্য হওয়া, অবনত হওয়া, নির্ভর করা, নিরাপত্তা দান করা ইত্যাদি।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, ইসলামের মূল বিষয়গুলো অর্থ্যাৎ এক আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস, তাঁর প্রেরিত নবী রাসুলগণ ও কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণ, তকদীর, কিয়ামত, মৃত্যু ও আখিরাত এর প্রতি অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদনুযায়ী আমল করাকে ইমান বলে।
আরও পড়ুন:
মুমিন কাকে বলে? তাদের বৈশিষ্ট্য? মুসলিম ও মুমিনের পার্থক্য
নিফাক শব্দের অর্থ কি? নিফাকের কুফল এবং প্রতিকারের উপায়
ঈমানের অর্থ ব্যাখ্যা বা প্রদান করতে গিয়ে ইমামগণের বিভিন্নধর্মী সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন-
- ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে, ‘আন্তরিক বিশ্বাস এুবং মৌখিক স্বীকৃতিই হলো ঈমান।’
- ইমাম গাজ্জালি (রহ.)এর মতে, ‘রাসুল (সা.) -এর আনীত সকল বিধি-বিধানসহ মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাই ঈমান।’
- ইমাম শাফেয়ী, মালেক এবং আহমদ ইবনে হাম্বলের (রহ.) বলেন, ‘অন্তরের বিশ্বাস স্থাপন, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আরকানসমূহ (ইসলামের বিধি-বিধান) কাজে পরিণত করাই ঈমান।
যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান প্রতি ঈমান আনতে হয়-
ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা-প্রশাখা আছে। এর মধ্যে, প্রধান ৭ টি বিষয়ের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ।
সেগুলো হলো-
- মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস।
- তাঁর প্রেরিত নবী রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস্ ।
- আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস।
- ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস।
- আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস।
- মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এর ওপর বিশ্বাস
- তাকদীরে প্রতি বিশ্বাস।
সুতরাং, সংক্ষেপে ঈমান সম্পর্কে বলা যায় যে, উপরে উল্লেখিত ইসলামের মৌলিক ৭ টি বিষয়ের প্রতি পূর্ণ আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করে সে অনুযায়ী আমল করার নামই ঈমান। একজন মুসলমানের উচিত সে অনুযায়ী আমল করা।
নবী কারিম (স: ) এরশাদ করেছেন, “ঈমানের সত্তরটির অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে, সর্বোত্তম শাখা হলো ,” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’’ বা আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই”। আর সবনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্ট দায়ক জিনিস সরিয়ে রাখা। লজ্জা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা।” (বুখারী ও মুসলিম)
আরও পড়ুন:
তাওহীদ কাকে বলে? তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?
আসমানি কিতাব কাকে বলে? কয়টি ও কি কি?
হিজরত শব্দের অর্থ কি? হিজরত কাকে বলে?
ঈমান ও ইসলামের সম্পর্ক
ঈমান এবং ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি শব্দ। এরা একে ওপরের পরিপূরক্। ঈমান ছাড়া যেমন ইসলাম মূল্যহীন ঠিক তেমনি ইসলাম ছাড়া ইমানের গুরুত্ব বা মূল্য নেই। ইসলাম এবং ঈমানের সমন্বয়ই হচ্ছে ইবাদাত। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করে সে অনুযায়ী আমল করার নামই ঈমান। অন্যদিকে, এসব বিষয় যে পালন করে সে ব্যক্তি একজন মুসলিম বা ইসলামিক ব্যক্তি। তাই বলা যায়, ঈমান ও ইসলাম একে ওপরের পরিপূরক্। এদের একটা ছাড়া অন্যটি মূল্যহীন।
ঈমানের গুরুত্ব
ইসলামে ঈমানের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ তা’আলা ঈমান ব্যতীত মৃত্যু ব্যক্তির জান্নাত হারাম বলে ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
( সূরা আল মায়েদা ৫:৭২ )
অর্থ- নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে, তাদের জন্য অবশ্যই জান্নাত হারাম করা হয়েছে এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম৷ আর যারা যালিম তাদের কোন সাহায্যকারী নেই৷
নিম্রে ঈমানের গুরুত্বের প্রধান কয়েকটি কারণ উল্লেখ্য করা হলো-
- ঈমান ছাড়া মানব জীবন মূল্যহীন। কেননা, এটি ইসলামের মূল ভিত্তি।
- মহান আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টি করার পর তার প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
- ইহকালীন এবং পরকালীন কল্যাণের জন্য ঈমাণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
- ঈমান ব্যতীত কোন ব্যক্তির আমল মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
- ইমান মানবতার সোপান। ঈমান ছাড়া কেউ নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারে না।
ঈমানের ফজিলত
ঈমানের ফজিলত অতুলনীয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
اللَّـهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
অর্থ- যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে, আল্লাহ তা’আলা তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। ( আল বাক্বারাহ ২৫৭ )
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে বান্দা বা গোলাম সন্দেহাতীতভাবে দুটি বাক্যের উপর ঈমান আনবে যে, সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ বা ইলাহ নেই ও হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাহলে সে এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যে, সে কোনভাবেই আল্লাহর জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না। ( সহীহ মুসলিম )
#
এই পোস্ট থেকে আমরা ঈমান কাকে বলে? কোন কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয়? ঈমান ও ইসলামের সম্পর্ক, ঈমানের গুরুত্ব ও ঈমানের ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারলাম। পোস্টটি কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ।