উকুন দূর করার উপায় | ঘরোয়া পদ্ধতিতে উকুন দূর করার উপায় | সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে
উকুন দূর করার উপায় ঔষধ
উকুন দূর করার উপায়
মাথার উকুন একটি ক্ষুদ্র পরজীবী। আকারে ক্ষুদ্র হলেও অনেক মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। মাথায় যখন উকুন হয় তখন চুলকায়, অস্বস্তি লাগে। পুরুষের চেয়ে নারীর চুলের মধ্যে উকুন বেশি দেখা যায়। মাথার চুলে উকুন হওয়াকে পেডিকিউলাস ক্যাপিটিস বলে। অনেকে এ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক ডাক্তার, কবিরাজ দেখিয়েছেন। তবে কোনো ভাবেই এই সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না।
উকুন কেন হয়?
মাথায় উকুন হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন-
- মাথা অপরিষ্কার থাকলে উকুন জন্ম নিতে পারে।
- গোসল বা অন্য সময় চুল ভেজানোর পর ভিজা চুল বেধে রাখলে।
- নিয়মিত চুলের সঠিকভাবে যত্ন না নিলে।
- মাথায় খুসকি বেড়ে গেলে।
- যাদের মাথায় উকুন আছে তাদের সংস্পর্শে থাকলে।
- মাথায় উকুন আছে এমন ব্যক্তির চিরুনি ও তোয়ালে ব্যবহার করলে।
উকুন কত ধরনের ও কি কি?
মানুষের দেহে সাধারণত ৩ ধরনের উকুন থাকে। যথা-
১) মাথায় উকুন- অনেক নর-নারীর মাথায় উকুন হয়, তাকে পেডিকিউলাস ক্যাপিটিস বলে।
২) দেহে উকুন- অনেক নর-নারীর দেহে উকুন হয়, তাকে পেডিকিউলাস করপোরিস বলে।
৩) লোমে উকুন- অনেক নর-নারীর দেহের লোম, বগলে, গোঁফে-দাড়িতে, চোখের পাতায় উকুন হয়। তাকে পেডিকিউলাস পিউবিস বলে।
উকুন থেকে মুক্তির উপায়
মাথার উকুন সাধারণত তামাটে রঙের হয়। এরা একসাথে শতাধিক ডিম পারে। যাদেরকে আমরা নিকি বা নিক বলে চিনি। এগুলো আসলে উকুনের ডিম। এসব লিকি বা লিক থেকে ৭-১০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটে বের হয় এবং মাথার উকুনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
দ্রুত উকুন থেকে মুক্তি পেতে মানুষ কতকিছুই না ব্যবহার করে। তার পরেও এর থেকে সহজে মুক্তি মিলেনা। তবে, আপনার সাথেও যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাকে এমন কিছু টিপস শেয়ার করবো যার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার মাথার উকুন দূর করতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
নিমপাতা
বিভিন্ন প্রকার রোগের চিকিৎসা, ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় নিমপাতা ব্যবহার করা হয়। নিমপাতার মধ্যে বহু ধরনের গুন রয়েছে। যেমন-
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল।
- অ্যান্টিভাইরাস।
- অ্যান্টিসেপ্টিক।
- অ্যান্টিফাঙ্গাল ।
- অ্যান্টিডায়াবেটিক।
- এনালেজিক।
- অ্যান্টিমাইক্রবাল।
- এবং রক্ত বিশুদ্ধকরণ উপাদান প্রভূতি।
উকুন তাড়াতে আপনি নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। এটি সহজে উকুন দূর করার উপায়। আপনার ব্যবহৃত শ্যাম্পুর মধ্যে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল মিশিয়ে নিন। তারপর গোসল করার সময় এটি ব্যবহার করুন। গোসলের পর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। দেখবেন চলে যাবে উকুন, সাথে উকুনের লিকি বা লিক।
রসুনের ব্যবহার
একটি রসুনের ১০ টি কোয়া নিন। তারপর সেগুলো খোসা ছাড়িয়ে ভালে করে বেটে নিন। তারপর ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্টের মতো করে মাথায় ভালো করে ঘষে লাগান। চুলের গোড়ার কোনো অংশ বাদ যেন না পরে। তারপর ৩০ মিনিট এভারে রাখুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন এটি অনুসরণ করেন। তাহলে দেখবেন আপনার মাথার উকুন ও লিকি দূর হয়ে গেছে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে উকুন দূর করার উপায় হচ্ছে এটি।
আরও পড়ুন: ছারপোকা থেকে বাঁচার উপায়
পেঁয়াজের রস
উকুন তাড়াতে পেঁয়াজের রস ভালো কাজ করে। সেজন্য আপনাকে পেঁয়াজের রস মাথায় লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে। এমনভাবে ম্যাসাজ করতে হবে যেন চুলের গোড়ার কোনো অংশ বাদ না পরে। এভাবে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। দেখবেন মাথার উকুন ও লিকি দূর হয়ে গেছে। সপ্তাহে দুবার এটি ব্যবহার করুন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে উকুন দূর করার আরেকটি উপায় হচ্ছে এটি।
নারকেল তেল ব্যবহার
চুলের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান হিসাবে পরিচিত নারকেল তেল। ২০১০ সালে ব্রাজিলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করলে উকুন দূর হয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে উকুন দূর করার জন্য এটি বেশ কার্যকর।
আপনি নারকেল তেলের সাথে লবঙ্গের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে ব্যবহার করলে চার ঘণ্টার মধ্যে মাথার প্রায় ৮০ শতাংশ উকুন মরে যায়।
পেট্রোলিয়াম জেলি
অনেকের নারকেল তেলের মধ্যে অ্যালার্জি থাকে। যাদের এ সমস্যা তাদের জন্য বিকল্প পদ্ধতি হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার মাথার উকুন তাড়াত পারবেন। এটি এমন একটি কার্যকরী উপাদান যা হয়ত আপনার বাসায় রয়েছে।
মেয়োনেজ, নারকেলের তেলের মতো পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়েও সহজে উকুন তাড়ানো সম্ভব। কিন্তু এর সমস্যা হলো পরিষ্কার করা বেশ ঝামেলার কাজ। বেশ কয়েকবার ধোয়ার পরেও এটি পরিষ্কার হতে চায়না। তবে, যাদের চুল ছোট তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক হবে কেননা পরিষ্কার করার ঝামেলা তুলনামূলকভাবে কম।
লেবুর রস
লেবু একটি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক। যা উকুন দূর করতে সাহায্য করে। সেজন্য আপনাকে লেবুর রস বের করে সরাসরি মাথায় লাগাতে হবে। এভাবে ঘন্টাখানেক রাখতে হবে। তারপর চিরুনির সাহায্যে উকুন দূর করুন। এভাবে সপ্তাহে দুবার করুন। ভালো উপকার পাবেন। সহজে চুলের নিক দূর করার উপায় হচ্ছে এটি।
বেকিং সোডা
এক ভাগ বেকিং সোডার সাথে তিন ভাগ কন্ডিশনার মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন। তারপর মাথায় লাগান। এভাবে ১৫ মাথায় লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঘন চিরুনি দিয়ে চুল চুল আঁচড়ে নিন। দেখবেন চলে যাবে উকুন, সাথে উকুনের লিকি বা লিক।
ভিনেগার দিয়ে উকুন দূর করার উপায়
সম পরিমাণ ভিনিগার আর পানির মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর মাথায় লাগান। এরপর তোয়ালে দিয়ে মাথা আধ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। পরে ঘন চিরুনি দিয়ে চুল চুল আঁচড়ে নিন। দেখবেন চলে যাবে উকুন, সাথে উকুনের লিকি বা লিক।
মেয়োনিজ
মেয়োনিজ মাথার উকুন তাড়াতে বেশ কার্যকর। এজন্য আপনাকে সারা রাত মাথায় মেয়োনিজ মাখিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঘন চিরুনি দিয়ে চুল চুল আঁচড়ে নিন। দেখবেন চলে যাবে উকুন, সাথে উকুনের লিকি বা লিক।
চিকন দাঁতের চিরুনি
চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে মাথার উকুন দূর করতে পারেন্। প্রাচীন মিশরীয়রা মাথার উকুন দূর করতে কাঠের তৈরি চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করত। গোসলের সময় চুলে শ্যাম্পু করার পর চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে চুল ব্রাশ করুন। দেখবেন উকুন অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
উকুনের সংক্রমণ এড়াতে করণীয়
আমরা আগেই জেনেছি, নানাবিধ কারণে আপনার মাথায় উকুনের জন্ম হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হলো- মাথা অপরিষ্কার না রাখা, গোসলের পর মাথা না শুকিয়ে চুল বেধে রাখা, সঠিকভাবে নিয়মিত চুলের যত্ন না নেওয়া, মাথায় খুসকি বেড়ে যাওয়া, আক্রানত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা, তার ব্যবহৃত চিরুনি ও তোয়ালে ব্যবহার হত্যাদি।
তাই উকুনের সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত মাথা পরিস্কার রাখুন, গোসলের পর মাথা শুকিয়ে তারপর চুল বেধে রাখুন, সঠিকভাবে নিয়মিত চুলের যত্ম নিন, সম্ভব হলে উপরে উল্লেখিত যে কোন পদ্ধিতি ব্যবহার করে চুলের যত্ম নিতে পারেন। তাহলে আপনার মাথার চুলে লিকি জন্ম নেওয়ার আগেই তা মরে যাবে। আপনার মাথায় খুসকি বেড়ে গেলে এর কারণ খুঁজুন। তাহলে সহজে আপনার মাথার খুশকি আপনি দূর করতে পারবেন।
বাজারের উকুননাশক প্রসাধনী চুলে ব্যবহার করবেন না। এর ফলে আপনার চুলের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। সব সময় পরিষ্কার বালিশের কভার ব্যবহার করুন।
প্রায় জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর
উকুন ও লিকি বা লিকের মধ্যে পার্থক্য কী?
উকুন এক ধরনের পরজীবী। অন্যদিকে লিকি বা লিক হচ্ছে উকুনের ডিম। সাধারণ এসব লিকি ৭-১০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে ফুটে বের হয় এবং মাথার উকুনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
উকুন ও লিকি কি অন্যের চুল থেকে আমার মাথায় আসতে পারে?
জ্বি অবশ্যই। একসাথে ঘুমালে, একই কাপড় ব্যবহার করলে অথ্যাৎ উকুনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে আপনার মাথায় উকুন ও লিকি আসতে পারে।
বাজারে উকুন মারার জন্য যেসকল ঔষধ পাওয়া যায় সেগুলো কী ক্ষতিকর?
জ্বি, ক্ষতিকর। কারণ, এসব প্রসাধনি বা ঔষধের সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা অতিমাত্রায় ব্যবহারে আপনার চুলের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
লবণ পানি কি উকুন বা লিকি মারতে সক্ষম?
না, শুধু লবণ পানির এ ক্ষমতা নেই। তবে এর সাথে কিছুটা ভিনেগারের সংশিশ্রণ করলে ভালো কাজ করে।
কোন ধরনের চুলে উকুনের উৎপাত বেশি হয়?
কমবেশি সকলের চুলে উকুনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে মাথা যদি অপরিচ্ছন্ন হয় তাহলে এসব মাথায় খুব সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। সেজন্য মাথা সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
####