ডোপ টেস্ট কি | কিভাবে-কোথায় ডোপ টেস্ট করা যায় | What is dope test

যেভাবে ডোপ টেস্ট করা হয়

ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত

 

ডোপ টেস্ট কি?

সারা পৃথিবীতে মাদক গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এর ফলে সমাজে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা। মাদকাসক্ত যে সকল ব্যক্তি রয়েছে তাদের মাদক গ্রহনের ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা যেমন অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করছে অপরদিকে, মাদক গ্রহনের ফলে হারাচ্ছে তাদের নিজস্ব যে কর্ম ক্ষমতা। এর ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সমাজে বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা যে শুধু সমাজ বা দেশের জন্য ক্ষতিকর তা নয়। এরা নিজের পরিবারের জন্য হুমকি সরুপ। অনেক মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদক গ্রহনের জন্য সংসারের সকল কিছু বিক্রি করে দেয়, পিতা-মাতা বা পরিবারের লোকজন মাদক গ্রহনের টাকা দিলে মা-বাবা ও পরিবারের লোকজনকে মারধর করে।  আবার অনেকে পরিবারের লোকদের হত্যা পর্যন্ত করে।

এসব বিষয় সামনে রেখে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এক ধরনের পদ্ধতি চালু করেছে বিভিন্ন দেশের সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এই পদ্ধতির নাম ডোপ টেস্ট। এর মাধ্যমে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা যায় বা মাদকাসক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

আজকের এই আর্টিকেলে ডোপ টেস্ট কি, ডোপ টেস্ট করালে কি কি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়, কিভাবে-কোথায় ডোপ টেস্ট করা যায়, ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

 

ডোপ টেস্ট কাকে বলে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক বা এলকোহল জাতীয় বেশ কিছু দ্রব্য আছে যা গ্রহণ করলে গ্রহনকারী ব্যক্তির শরীরে এর রেশ শরীরে থেকে যায়। আর এগুলোই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে চিহ্নিত বা শনাক্ত করা যায়।

অনেক খেলোয়াড় খেলা শুরুর আগে মাদক গ্রহন করে যাতে সে অন্যান্য খেলোয়াড়ের চেয়ে ভালো খেলতে পারে। এছাড়া, ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী অতীতে কোন ধরনের মাদক বা ড্রাগ ব্যবহার করেছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে ডোপ টেস্ট করা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালু রয়েছে।

 

ডোপ টেস্ট যেভাবে আলোচনায় আসলো

একজন ব্যক্তি মাদকে আসক্ত কিনা তা জানার জন্য সাধারণত ডোপ টেস্ট করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় যখন ডোপ টেস্ট করানো শুরু হলো তখন থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলো।

সর্বশেষ চলতি শিক্ষাবর্ষে যখন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করানো হবে এমন তথ্য জানা গেলো তখন থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন:

অনলাইনে গামকা মেডিকেল রিপোর্ট চেক

উকুন দূর করার উপায়

বাংলাদেশে ডোপ টেস্ট

বাংলাদেশে ডোপ টেস্ট নিয়ে এখনও তেমন কোনো নির্দেশনা বা বাধ্যবাধকতা নেই। তবে খুব শীঘ্রই তা বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালু হলে সরকারি, আধাসরকারি , স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে প্রবেশের সময় মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদর্শনের পাশাপাশি ড্রপ টেস্ট এর সার্টিফিকেট প্রদর্শন করা হতে পারে।

তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদর্শনের পাশাপাশি ড্রপ টেস্ট এর সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এছাড়া, কোন অস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নেও ড্রপ টেস্ট এর সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।

 

যেভাবে ডোপ টেস্ট করা হয়

সাধারণত অভিযুক্তদের মুত্র, রক্ত  ইত্যাদি দিয়ে ডোপ টেস্ট করানো হয়। ডোপ টেস্টে মাদক গ্রহণের শেষ ১ সপ্তাহ মূখের লালা, শেষ ২ মাস রক্ত, শেষ ১২ মাস বা এক বছর চুল পরীক্ষার মাধ্যমে মাদক শনাক্ত হবে।

এছাড়াও, ডোপ টেস্টে স্প্যাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোন মাদক গ্রহন করেছে কিনা তা জানা যাবে।

বর্তমানে মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি শেষ ১০ দিনে কোনো মাদক গ্রহণ করেছেন কি না তা জনা যাবে।

 

ডোপ টেস্টে যাদের ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে

প্রাথমিক পরীক্ষায় কোন ব্যক্তির শরীরে মাককের উপস্থিতি পাওয়া গেলে তাকে মাদক আসক্ত বলা যাবেনা।  কারণ, হতে পারে মাদক গ্রহন ছাড়াও অন্য কোনভাবে ওই ব্যক্তির মধ্যে রাসায়নিক উপাদান আসতে পারে।

কিন্তু যখন দ্বিতীবার টেস্ট করানো হবে তখন যদি তার শরীরে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায় তাহলে ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত এবং তার তখন ডোপ টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ চলে আসে।

 

ডোপ টেস্ট করতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশে ডোপ টেস্ট করানো যায়। সেজন্য প্রতিটি টেস্টের জন্য ৯০০ টাকা ফি প্রয়োজন হয়। সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে উত্তীর্ণ ব্যাক্তিকে মেডিকেল সার্টিফিকেটের সাথে ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। ডোপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ফি ৯০০ টাকা।

 

ডোপ টেস্ট করাতে কত সময় লাগে?

পরীক্ষায় যদি নেগেটিভ ফলাফল আসে তাহলে সাধারণ ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ডোপ টেস্টের ফলাফল পাওয়া যায়। তবে, পরীক্ষায় যদি পজিটিভ ফলাফল আসে তাহলে ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পেতে কয়েকদিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

 

সিগারেট খেলে কি ডোপ টেস্টে পজিটিভ আসার সম্ভাবনা আছে?

জ্বি না। সিগারেটের নিকোটিনকে ডোপ টেস্টে গন্য করা হয়না। যার কারণে আপনি সিগারেট খেলও ডোপ টেস্টে পজিটিভ আসার সম্ভাবনা নেই।

 

ডোপ টেস্টের ফলাফল কি ভুল আসতে পারে?

প্রাথমিক পরীক্ষায় ডোপ টেস্টের ফলাফল ভুল আসতে পারে। তবে, দ্বিতীয় টেস্টে ফলাফল ভুল আসার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।

 

কাউকে না জানিয়ে কি তার ডোপ টেস্ট করা সম্ভব?

জ্বি, কাউকে না জানিয়ে আপনি ডোপ টেস্ট করতে পারবেন। সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তির ডোপ টেস্ট আপনি তাকে না জানিয়েও করতে পারবেন। গোপনে ডাক্তারের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তির রক্ত, চুল বা অন্য কোন নমুনা সংগ্রহ করে ডোপ টেস্ট করা যেতে পারে।

 

ডোপ টেস্টের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নমুনা কোনটি?

ডোপ টেস্টের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এবং বেশি ব্যবহৃত নমুনা হচ্ছে মূত্র।

 

কত দিন ধরে মাদক গ্রহণ করলে ডোপ টেস্টে পজিটিভ আসবে?

কতদিন ধরে মাদক গ্রহণ করা হচ্ছে তার উপর ডোপ টেস্টের ফলাফল নির্ভর করে না। ডোপ টেস্ট করানোর নির্দিষ্ট কিছুদিন আগে মাদক গ্রহণ করলে ডোপ টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে।

 

কারো ঔষধের কারণে ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসলে কী করা?

কোন ব্যক্তির ঔষধের কারণে ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসলে ঐ ঔষধ গ্রহণের প্রমাণ ও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে। যথাযথ প্রমাণ ও কাগজপত্র দেখাতে পারলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন হবেনা।

 

ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায়

ডোপ টেস্টের ফলাফল প্রজেটিভ হলে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া দেখা দিতে পারে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা। শরীরের সমস্যা তো রয়েছেই। এ থেকে বাঁচার জন্য মাদক বন্ধ করার চেয়ে আর কোন ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারেনা।

তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি মাদক গ্রহণ বন্ধ করে থাকেন, মাদক বন্ধ করার অন্ততপক্ষে তিন মাস পর টেস্ট করালে আপনার ডোপ টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

 

#####

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button