পরিবার কাকে বলে? পরিবারের শ্রেণিবিভাগ এবং পরিবার কত প্রকার?

পরিবার কাকে বলে? পরিবার কত প্রকার?

পরিবার কাকে বলে?

পরিবার কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে? চলুন খুজি!
মানুষ সামাজিক জীব । পরিবার হচ্ছে সমাজের মৌলিক ও ক্ষুদ্রতম আদিম সামাজিক প্রতিষ্ঠান । মানব সৃষ্টির আদি থেকেই সমাজে বিদ্যমান এবং সমাজের প্রাথমিক সাংগঠনিক হল পরিবার ।

প্রকৃতপক্ষে পরিবার ব্যবস্থা বিকশিত হবার মাধ্যমেই সমাজের উৎপত্তি হয় । সমাজের এই সংগঠন থেকেই মানব জাতির বিকাশ হয়েছে এবং সমাজের অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবারের রূপ—কাঠামো পরিবর্তিত হয় ।

ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Family’ এসেছে রোমান শব্দ ‘Famuleas’ শব্দ হতে যার অর্থ হল ‘ভৃত্য বা সেবক’। প্রাচীন রোমের আইন ব্যবস্থায় ক্রীতদাস এবং উৎপাদক গোষ্ঠী, অন্য ভৃত্যগণ, অভিন্ন বংশ কিংবা বিবাহসূত্র সম্পর্কিত অন্যান্য সদস্যদের বোঝানোর জন্য ‘Famulus’ শব্দটি ব্যবহৃত হত।

আবার আপনারা অনেকেই জানেন যে, ‘Family’ ’শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Familia’ হতে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে ‘সেবক’। শব্দের উৎপত্তি নিয়ে অনেকের মধ্যে যেমন মতভেদ রয়েছে তেমনি পরিবারের সংজ্ঞা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। যা থাকাটাই স্বাভাবিক। রক্ত ও বৈবাহিক সম্পর্ক পরিবারের ভিত্তি। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন পুরুষ এবং একজন নারী মিলে যৌথভাবে  একসাথে বাস করার সমাজ স্বীকৃত সংগঠনকে পরিবার বলা হয় ।

পরিবারের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে সমাজ বিজ্ঞানী অসবার্ণ নিমকফ ‘‘A Hand Book of Sociology’ গ্রন্থে বলেন— সন্তান—সন্তুতির অধিকারী বা সন্তান—সন্তুতি বিহীন স্বামী—স্ত্রীর অথবা সন্তান—সন্তুতির অধিকারী কোন একজন পুরুষ বা একজন মহিলার দ্বারা গঠিত মোটামুটি স্থায়ী সংস্থাকে পরিবার বলে ।”

অধ্যাপক ম্যাকাইভারের মতে, সন্তান—সন্তুতির জন্মদান ও লালন—পালনের নিমিত্তে যৌন সম্পর্ক দ্বারা সংগঠিত ক্ষুদ্র বর্গকে পরিবার বলে। পরিবার হলো সহযোগিতা, মায়া, স্নেহ, মমতা ও বন্ধনে গঠিত ক্ষুদ্র কিন্তু শাশ্বত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

 

পরিবারের শ্রেণীবিভাগ বা পরিবার কত প্রকার?

তিনটি প্রধান সূত্রের উপর ভিত্তি করেই পরিবারের শ্রেণীবিভাগ গুলো করা হয়। যথাঃ

  1. বংশ পরিচয় ও নিয়ন্ত্রণের ধারা;
  2. বৈবাহিক প্রথা এবং
  3. পারিবারিক কাঠামোর সীমানা।
পরিবার কাকে বলে পরিবার কি পরিবারের শ্রেণিবিভাগ এবং পরিবার কত প্রকার
পরিবারের শ্রেণিবিভাগ

 

পরিবারের শ্রেণীবিভাগ এ পর্যায়ে আলোচনা করা হলো-

 

১। বংশ পরিচয় এবং নিয়িন্ত্রনের প্রেক্ষিতে পরিবার ২ প্রকার।

ক) পিতৃতান্ত্রিক।

খ) মাতৃতান্ত্রিক পরিবার।

) পিতৃতান্ত্রিক পরিবারঃ

এ ধরনের পরিবারে পুরুষের মাধ্যমে বংশ পরিচয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। পরিবারের কর্তা হলো পুরুষ। পরিবারের ভরন পোষণ ও নিরাপত্তাসহ যাবতীয় দায়দায়িত্ব পুরুষের হাতে অর্পিত থাকে। সমাজ বিজ্ঞানী ‘হেনরী মেইন” একটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবারকে আদি এবং অকৃত্রিম পরিবার ব্যবস্থা বলে মনে করেন।

মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে নারীর অধিকার সবচেয়ে বেশী অন্যদিকে, বংশ পরিচয় এর ব্যাপারটিও নারীর মাধ্যমে নির্ধারিত হয় ।

 

আরো পড়ুন-

সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে

যৌথ পরিবার কাকে বলে? যৌথ পরিবারের সুবিধা ও অসুবিধা

 

২. সাধারনত বৈবাহিক প্রথা অনুযায়ী একটি পরিবারকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

ক) এক পত্নীক পরিবার

খ) বহুপত্নী পরিবার

(গ) বহুপতি পরিবার।

 

) একপত্নীক পরিবারঃ

এ ধরনের পরিবার বলতে সেই ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে একজন পুরুষ এবং একজন স্ত্রী লোক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার গঠন করে। এ ধরনের পরিবারি সবচেয়ে বেশী প্রচলিত।

) বহুপত্নীক পরিবারঃ

এ ধরনের পরিবারে একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রীলোককে বিবাহ করে পরিবার গঠন করে।

যেমন—ভূটানের রাজপরিবারের এ প্রথা প্রচলিত আছে।

গ) বহুপতি পরিবারঃ

এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থায় স্ত্রীলোক একাধিক পুরুষ কে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে একসঙ্গে বসবাস করে ।

যেমনঃ ভারতের হিমাচল প্রদেশে কিন্নর উপজাতিদের মধ্যে এ প্রথা প্রচলিত আছে ।

 

৩. পরিবারের সংগঠন কাঠামো আকৃতির উপর ভিত্তি করে পরিবারকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

ক) একক পরিবার

খ) যৌথ পরিবার ।

) একক পরিবারঃ

এ ধরনের পরিবারে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রী এবং তাদের সন্তান—সন্তুতিরা পরিবারের সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয় । একক পরিবার অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র । এরূপ পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ বা পিতার প্রাধান্য স্বীকার করা হয় ।

) যৌথ পরিবারঃ

এ ধরনের পরিবারে স্বামী, স্ত্রী সন্তান—সন্তুতি, ভাই—বোন, মাতা—পিতা, দাদা— দাদী, ভাইয়ের সন্তান—সন্তুতি এমনকি স্ত্রীর ভাই—বোন ও পিতা—মাতাসহ একত্রে বসবাস করে । এধরনের পরিবারে আয় ব্যয়, কিংবা উৎপাদন পরিবারের কর্তা কতৃর্ক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে ।

 

কেমন লাগল আমাদের আজকের আর্টিকেল? যদি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয় তবে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ।

Back to top button