বল কাকে বলে? বল কত প্রকার ও কি কি?
মহাকর্ষ বল কাকে বলে?
বল (Force)
অন্যান্য বারের ন্যায় আবারো আপনাদের মাঝে হাজির হলাম আরেকটি বিষয় নিয়ে। আজ আপনাদের সাথে পদার্থ বিজ্ঞানের বল নিয়ে আলোচনা করবো। আপনারা এ পোস্ট পড়ে জানতে পারবেন বল কাকে বলে? বল কত প্রকার ও কি কি? মৌলিক বল কাকে বলে? যৌগিক বল কাকে বলে?মহাকর্ষ বল কাকে বলে? অভিকর্ষ বল কি? তড়িৎ – চুম্বকীয় বল কাকে বলে? সবল নিউক্লীয় বল কাকে বলে? দুর্বল নিউক্লীয় বল কাকে বলে? ইত্যাদি । তাহলে চলুন আগে বল কাকে বলে তা দিয়ে আজকের বিষয় শুরু করি।
বল কাকে বলে? (what is force)
বলের ইংরেজি শব্দ Force। নিউটনের প্রথম সূত্রে প্রথমবার বল শব্দটির প্রয়োগ দেখানো হয়েছে। যে বাহ্যিক প্রভাব কোন স্থির বস্তু ওপর ক্রিয়া করে স্থির বস্তুকে গতিশীল করে বা করতে চায় অথবা গতিশীল বস্তর ওপর ক্রিয়া করে গতিশীল বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন করে বা করতে চায়। সেই বাহ্যিক প্রভাব কে বল বলে।
যেমন : ফুটবল খেলার মাঠে একজন ফুটবল খোলোয়ারের কাছে খেলার বল এমনি যায়না বরং সেখানে কোন একজন ফুটবল খেলোয়ার তার পা দিয়ে বল প্রয়োগ করার পরেই অন্য খেলোয়ার সেই বল পায়।
বলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Force)
- বল কোন স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে অথবা গতিশীল বস্তুকে স্থির করতে পারে।
- বল সবসময় জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া সম্পাদন করে। অথ্যাৎ দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া ছাড়া কখনো বলের সৃষ্টি হয়না।
- কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে ঐ বস্তুর আকারের বিকৃতি ঘটতে পারে।
- বল একটি বস্তুর গতির দিক পরিবর্তন করতে পারে। অর্থাৎ একটি গতিশীল বস্তুর উপর বল প্রয়োগ হলে সেই বস্তুর গতি বা দিক পরিবর্তন হয়ে যায়।
বলের একক কি?
- CGS (সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড) পদ্ধতিতে বলের একক ডাইন।
- Unit (স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারন্যাশনাল) পদ্ধতিতে বলের একক নিউটন (N)।
- ১ নিউটন হলো ১০০০০০ ডাইন এর সমতুল্য।
বলের মাত্রা কি?
বল, [F]=[MLT−2]
বলের রাশি কি?
বল একটি ভেক্টর রাশি। যার মাত্রা এবং দিক উভয়ই আছে।
বলের সূত্র
ভর ও ত্বরণের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়। বলের সূত্র গাণিতিকভাবে এভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে:
F = ma
এখানে,
F দ্বারা বলকে (Force) প্রকাশ করা হয়েছে।
a দ্বারা ত্বরণকে (acceleration) প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, ত্বরণ ও ভরের গুণফলের সমান হচ্ছে বল। m ভরের একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করলে a ত্বরণ সৃষ্টি হবে।
বলের প্রকারভেদ
প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরণের বল রয়েছে। আপনাকে যদি কিছুক্ষন সময় দেওয়া হয় তাহলে আপনি বলের বিশাল একটা লিস্ট করতে পারবেন। এর মধ্যে কিছু মৌলিক বল আর কিছু যৌগিক বল।
মৌলিক বল:
যে সকল বল অকৃত্তিম অর্থাৎ অন্য বল থেকে উৎপন্ন হয় না এবং বিশ্লেষণ করলে ঐ বল ব্যতীত আর কোন বল পাওয়া যায় না বরং অন্যান্য বল এই সকল বল থেকে উৎপন্ন হয় তাকে মৌলিক বল বলে। যেমন, মহাকর্ষ বল, তড়িৎ – চুম্বকীয় বল ইত্যাদি।
যৌগিক বল:
মৌলিক বল ব্যতীত সকল বল যৌগিক বল। অর্থাৎ এসব বল মৌলিক বল হতে উৎপন্ন হয়। যেমন, ঘর্ষণ বল, স্থিতিস্থাপক বল ইত্যাদি।
প্রকৃতিতে মৌলিক বল চার প্রকার। যথা-
ক) মহাকর্ষ বল।
খ) তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল।
গ) সবল নিউক্লীয় বল ।
ঘ) দুর্বল নিউক্লীয় বল।
মহাকর্ষ বল কাকে বলে-
মহাকর্ষ বলকে ইংরেজিতে Gravitational force বলে। এই সৃষ্টিজগতের সকল বস্তু তাদের ভরের কারণে একে অপরকে যে বল দিয়ে আকর্ষণ করে সেটাই হচ্ছে মহাকর্ষ বল। এই বলের পরিমাণ ক্রিয়াশীল বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক । এই মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘোরে, গ্যালাক্সির ভেতরে নক্ষত্ররা ঘুরপাক খায়।
মাধ্যাকর্ষণ বল কাকে বলে-
আমাদের ওপর যখন পৃথিবীর মহাকর্ষ বল কাজ করে তখন তাকে মাধ্যাকর্ষণ বলে। এই মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে আমরা নিজেদের ওজনের অনুভূতি পাই। এই মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদেরকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে রেখেছে।
তড়িৎ-চুম্বকীয় বল কাকে বলে-
তড়িৎ চৌম্বক বলকে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলও বলা হয়। ইংরেজিতে এ বলকে Electromagnetic force বলে। দুটি আহিত বা চার্জিত কণা তাদের আধানের কারণে একে অপরের উপর যে আকর্ষন বা বিকর্ষন অনুভব করে তাকে তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল বলে। এই বল মহাকর্ষ বল অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী। এর আপেক্ষিক সবলতা ১০৩৬।
সবল নিউক্লীয় বল কাকে বলে-
সবল নিউক্লীয় বলকে ইংরেজিতে Weak nuclear force বলে। সবল নিউক্লীয় বল সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে শক্তিশালী বল। তড়িৎ চৌম্বক বল থেকেও একশ গুণ বেশি শক্তিশালী সবল নিউক্লীয় বল।
পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। সমষ্টিগতভাবে এদেরকে বলা হয় নিউক্লিয়ন ( Nucleon ) । পরমাণুর কেন্দ্রে যে নিউক্লিয়াস রয়েছে তার ভেতরকার প্রোটন এবং নিউট্রনকে যে শক্তিশালী বল তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। এর আপেক্ষিক সবলতা ১০৪১। প্রচণ্ড বলে আটকে থাকার কারণে এর মাঝে অনেক শক্তি জমা থাকে। তাই বড় নিউক্লিয়াসকে ভেঙে কিংবা ছোট নিউক্লিয়াসকে জোড়া দিয়ে এই বলের কারণে অনেক শক্তি তৈরি করা সম্ভব। নিউক্লিয়ার বোমা সেজন্য এত শক্তিশালী। সূর্য থেকে আলোর তাপও এই বল দিয়ে তৈরি হয়।
দুর্বল নিউক্লিয় বল কাকে বলে-
দুর্বল নিউক্লিয় বলকে ইংরেজিতে Weak nuclear force বলে। যে স্বল্প পাল্লার ও স্বল্প মানের বল নিউক্লিয়াসের মধ্যে ক্রিয়া করে অস্থিশীলতার সৃষ্টি করে তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে।
প্রকৃতিতে অনেক মৌলিক পর্দার্থ আছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে যায়। এই সমস্ত নিউক্লিয়াসকে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস বলা হয়। যেমন- ইউরেনিয়াম। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে তিন ধরনের কণা নির্গত হয়। সেগুলোকে আলফা কণা, বিটা কণা ও গামা কণা বলা হয়। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যখন বিটা কণা নির্গত হয় তখন একই সাথে শক্তিও নির্গত হয়। এই নির্গত শক্তি বিটা কণার গতিশক্তির চেয়ে অনেক বেশি।
এটাকে দুর্বল বলা হয় কারণ এটা তড়িৎ চৌম্বক বল থেকে দুর্বল (প্রায় ট্রিলিয়ন গুণ) কিন্তু মোটেও মহাকর্ষ বলের মতো এত দুর্বল নয়। মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বক বল যেকোনো দূরত্ব থেকে কাজ করতে পারে কিন্তু এই বলটা খুবই অল্প দূরত্বে (10-18m) কাজ করে। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যে বেটা (B) রশ্মি বা ইলেকট্রন বের হয় সেটার কারণ এই দুর্বল নিউক্লিয় বল।
বেশি শক্তিশালী থেকে কম শক্তিশালী বলের ক্রম-
প্রকৃতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী বল হচ্ছে সবল নিউক্লিয় বল । মহাকর্ষ বল হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল। মহাকর্ষ বলের চেয়ে দুর্বল নিউক্লিয় বল শক্তিশালী। আবার দুর্বল নিউক্লিয় বলের চেয়ে তড়িৎ চৌম্বক বল শক্তিশালী। তড়িৎ চৌম্বক বল শক্তিশালী বলের চেয়ে সবল নিউক্লিয় বল শক্তিশালী।
সাম্য বল কাকে বলে?
কোন বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে বলের যোগফল যদি শূণ্য হয় তখন বস্তু সাম্য অবস্থায় থাকবে। বলের এই লব্ধিকে সাম্য বল বলে। যদি কোন বস্তুর উপর সাম্য বল প্রযুক্ত হয় তাহলে বস্তুর মধ্যে কোন ধরনের ত্বরণ সৃষ্টি হয় না।
অসাম্য বল কাকে বলে?
কোন বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে বলের যোগফল যদি শূণ্য না হয় তখন বস্তু সাম্য অবস্থায় থাকেনা। বলের এই লব্ধিকে অসাম্য বল বলে। এ বলে ত্বরণ সৃষ্টি হয়।
স্পর্শ বল কাকে বলে?
কোন বস্তুকে স্পর্শ করে যে বল প্রয়োগ করতে হয় তাকে তাকে স্পর্শ বল বলে।
অস্পর্শ বল কাকে বলে?
কোন কিছুর স্পর্শ ছাড়া কোন বস্তুতে যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে অস্পর্শ বল বলে।
আমাদের পিডিএফ বই কালেকশান গুলো পেতে |
আজকের লিখা এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগল আমাদের আর্টিকেল? ভাল লাগলে আমাদের শেয়ার করে সাপোর্ট করুন।
অনেক কিছু জানতে পারলাম l
English প্রতিশব্দ গুলো দিলে ভালো হতো l