বিদেশের মাটিতে দেশের মোবাইল সিম ব্যবহারের উপায়
দেশের মোবাইল সিম বিদেশে ব্যবহারের উপায়
নানা কারণে বিদেশে যাওয়ার সময় দেশে ব্যবহৃত সিমটি সাথে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, বিদেশে যাওয়ার পর দেশে ব্যবহৃত সিমের নাম্বারে অন্য কেউ ফোন দিতে পারে। জরুরী প্রয়োজনে খোঁজতে নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
কিন্তু, আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা দেশি সিম বিদেশে ব্যবহার করতে জানেন না বা দেশি সিম যে বিদেশে ব্যবহার করা যায় সেটাই জানেন না। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাকে জানাবো বিদেশের মাটিতে দেশীয় সিম কীভাবে ব্যবহার করা যায়।
দেশীয় মোবাইল সিম বিদেশে ব্যবহার করবেন যেভাবে
বিদেশে দেশীয় সিম ব্যবহার করার জন্য প্রথমেই মোবাইল নেটওয়ার্কের একটি কারিগরি দিক সম্পর্কে জানতে হবে। যেটি আন্তর্জাতিক রোমিং নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে যে কোন দেশীয় অপারেটর কম্পানির সিম বিদেশের মাটিতে ব্যবহার করা যায়। তবে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু শর্ত এবং পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। তাহলে চলুন সেগুলো জেনে নেই।
আন্তর্জাতিক রোমিং সিস্টেম কী?
আন্তর্জাতিক মোবাইল রোমিং হলো এমন এক ধরনের সেবা যে দেশীয় মোবাইল সিম ব্যবহারকারীকে অন্য দেশে যাওয়ার পর ভয়েস কল, টেক্সট মেসেজ পাঠানো বা গ্রহণ করা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে সহ নানা সুবিধা দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
মোবাইল ফোন কি? মোবাইল ফোনের জনক, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
কম্পিউটার কাকে বলে? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার
আন্তর্জাতিক রোমিং সিস্টেম কীভাবে কাজ করে
একজন মোবাইল সিম ব্যবহারকারী অন্য দেশে গিয়ে যখন মোবাইলটি চালু করেন, তখন সেটি ওই দেশের স্থানীয় মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। বিদেশি নেটওয়ার্কটি ওই মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর মোবাইল থেকে সংযোগ গ্রহণ করে। সংযোগ গ্রহনের পর এটি তার সিস্টেমে নিবন্ধিত কি-না তা শনাক্ত করে।
ব্যবহারকারীর দেশ এবং যে দেশে ব্যবহারকারী গিয়েছেন এই দুই দেশেরর মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে রোমিং চুক্তি থাকলে বিদেশি নেটওয়ার্ক সিগন্যালকে একটি আন্তর্জাতিক ট্রানজিট নেটওয়ার্কের দিকে রুট করে যা ক্যারিয়ার গন্তব্য নেটওয়ার্কে কল ডেলিভারি সম্পন্ন করে। এটি হয়ে গেলে অন্যদিকে গন্তব্য নেটওয়ার্কটি কলটি সংযুক্ত করে।
বিদেশি নেটওয়ার্কটি দেশীয় নেটওয়ার্ক থেকে মোবাইল ব্যবহারকারী সম্পর্কে নানা তথ্য জেনে থাকে। বিশেষ করে ব্যবহৃত ফোনটি হারিয়ে বা চুরি হয়েছে কিনা, মোবাইল ডিভাইসটি আন্তর্জাতিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত কি-না ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:
ইউনিকোড কি? ইউনিকোড প্রতিষ্টার কারন এবং সুবিধা সমূহ
ভিডিও কনফারেন্সিং কি? ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা
যদি দেশীয় নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া তথ্য বিদেশী নেটওয়ার্ক সন্তুষ্ট এবং ব্যবহৃত ফোনটি ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হলে বিদেশি নেটওয়ার্ক ডিভাইসটির জন্য একটি অস্থায়ী গ্রাহক রেকর্ড তৈরি করে। একইসাথে, দেশীয় নেটওয়ার্ক ডিভাইসটি কোথায় অবস্থিত তার গ্রাহক রেকর্ড আপডেট করে, যাতে ফোনে কোন কল করা হলে এটি যথাযথভাবে রাউট করা যায়।
অর্থাৎ, বাংলাদেশি একজন নাগরিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলে ওই নাগরিকের ব্যবহৃত মোবাইল সিমটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল নেটওয়ার্ক কর্তৃক অনুমোদিত হলে সেটি মার্কি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সিস্টেমে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
অতঃপর গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য উভয় দেশের অপারেটর হালনাগাদ করবে। বাংলাদেশি সিমটির সেবা ব্যবহারের চার্জ ধার্য হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলরেট অনুযায়ী। এ সময় সিমটিতে যাবতীয় ইনকামিং-আউটগোয়িং-এর জন্য চার্জ ধরা হবে।
দেশের সিম বিদেশের মাটিতে ব্যবহার করার নিয়ম
রোমিং সার্ভিস সক্রিয় করার উপায়
সিম কার্ডে আন্তর্জাতিক রোমিং সেবা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর কোম্পানির অফিসে যেতে হবে। এ সময় যা যা প্রয়োজন হবে তা হলো-
- ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের উভয় পাশের ফটোকপি।
- প্রিপেইড সিমের জন্য ঠিকমতো পূরণকৃত আইআরএফ (আন্তর্জাতিক রোমিং ফর্ম)।
- আইএসডি (আন্তর্জাতিক সাবস্ক্রাইবার ডায়ালিং) সংযোগসহ প্রিপেইড সংযোগের সাবস্ক্রিপশনের ফটোকপি।
- পাসপোর্টের প্রথম পাঁচ পৃষ্ঠা ফটোকপি।
- ব্যবহারকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি (দুই কপি)।
- আন্তর্জাতিক কারেন্সি অ্যাকাউন্টে শুরুতে স্ট্যান্ডার্ড প্রিপেইড রোমিং সার্ভিসের জন্য কমপক্ষে ২৫$ জমা রাখতে হবে। পরবর্তীতে প্রতিবার ১০$ জমা করা যাবে।
এসব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর সিম কোম্পানি আবেদকারীর সিমে আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস চালু করে দেবে।
দুই দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে সামঞ্জস্যতা
মোবাইলের নেটওয়ার্কের ধরন তথা জিএসএম ৯০০/১৮০০/১৯০০/অন্যান্য সংস্করণগুলো অবশ্যই বিদেশি নেটওয়ার্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সেজন্য বিদেশে যাওয়ার আগে সঠিক সিম কম্পানি নির্বাচন করতে হবে। দুটি উপায়ে এই কাজটি করা যায়। তা হলো-
প্রথমত, যদি মোবাইল নেটওয়ার্ক বা অপারেটর সিলেকশন অপশনটি সয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক হয়ে থাকে তাহলে মোবাইল ফোন নিজ থেকেই বিদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে যাবে। আবার যখন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে তখন নিজ থেকেই পরিবর্তন হয়ে যাবে। অর্থাৎ, আশেপাশে যেখানেই নেটওয়ার্ক সিস্টেম ভালো পাবে সেখানেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
ইন্টারনেট কাকে বলে? ইন্টারনেট কত প্রকার? সুবিধা ও অসুবিধা
কৃত্রিম উপগ্রহ কি বা কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের প্রকারভেদ ও ব্যবহার
দ্বিতীয়ত, মোবাইল নেটওয়ার্ক বা অপারেটর সিলেকশন যদি সয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক না হয় তাহলে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে একটি নেটওয়ার্ক বেছে নিয়ে নিজ থেকে আন্তর্জাতিক রোমিং সিস্টেম চালু করতে হবে
দুই দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে সামঞ্জস্যতা
মোবাইলের নেটওয়ার্কের ধরন তথা জিএসএম ৯০০/১৮০০/১৯০০/অন্যান্য সংস্করণগুলো অবশ্যই বিদেশি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এজন্য বিদেশযাত্রার আগে সঠিক মোবাইল নেটওয়ার্ক বা সিম কোম্পানি নির্বাচন করে নিতে হবে। এই কাজটি দুটি উপায়ে করা যায়-
প্রথমত, মোবাইল নেটওয়ার্ক বা অপারেটর সিলেকশন অপশনটি যদি অটোমেটিক করা থাকে, তাহলে মোবাইল নিজে থেকেই বিদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে যাবে। চলাফেরার সময় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে হ্যান্ডসেটটি নিজে থেকেই নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে নেবে। অর্থাৎ, আশেপাশে যেখানেই নেটওয়ার্ক সিস্টেম ভালো হবে সেটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
ই-সিম কী? ই-সিমের সুবিধা ও অসুবিধা এবং ব্যবহারের নিয়ম
মোবাইল অফিশিয়াল না আন অফিশিয়াল বুঝবেন যেভাবে
দ্বিতীয়ত, মোবাইল নেটওয়ার্ক বা অপারেটর সিলেকশন অপশনটি ম্যানুয়েল হলে ব্যবহারকারিকে একটি নেটওয়ার্ক বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রোমিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
আন্তর্জাতিক রোমিং সিস্টেম চালু করার পদ্ধতি
মোবাইল অপারেটরের ওপর নির্ভর করে প্রথমে এর নেটওয়ার্ক সিলেকশন, settings মেনুতে প্রবেশ করতে হবে। তারপর সার্চ করলে বেশ কিছু সময় ডিভাইস বিভিন্ন নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকবে। এক পর্যায়ে আশেপাশের সকল নেটওয়ার্ক মোবাইলের
স্ক্রিনে দেখাবে এবং সেগুলোর মধ্যে থেকে যে কোন একটিতে প্রেস করে নেটওয়ার্কটির সাথে সংযুক্ত হওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:
ইনফ্রারেড কি ? ইনফ্রারেড কত প্রকার? সুবিধা ও অসুবিধা
ডেটা ট্রান্সমিশন স্পীড কি? কত প্রকার ও কি কি?
আন্তর্জাতিক অ্যাক্সেস কোড
এবার সিমটি ব্যবহার অর্থাৎ বিদেশ থেকে নিজ দেশে বা অন্যান্য দেশে ফোন করতে প্রয়োজন হবে আন্তর্জাতিক অ্যাক্সেস কোড। এই অ্যাক্সেস কোডের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই সিমটি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশগুলোতে কথা বলতে পারবে।
অধিকাংশ দেশের অ্যাক্সেস কোড হলো: + (প্লাস) অথবা ০০। এই অ্যাক্সেস কোডের পর কাঙ্ক্ষিত দেশের কান্ট্রি কোড দিয়ে মোবাইল নাম্বারটি ডায়াল করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, + তারপর ৬০ (কান্ট্রি কোড) এবং সবশেষে (ফোন নাম্বার) ০০ ৬০ (ফোন নাম্বার)।
নিম্নে বিভিন্ন দেশের অ্যাক্সেস কোড দেওয়া হলো-
যুক্তরাষ্ট্র- ০১১; কানাডা- ০১১ +; কাতার- ০০; জর্জিয়া- ৮১০ +; সৌদি আরব- ০০; থাইল্যান্ড- ০০১; জার্মানি- ০০; মালয়শিয়া- ০০; কেনিয়া- ০০০; নাইজেরিয়া- ০০৯; হংকং- ০০১ +; সিঙ্গাপুর- ০০১(সিংটেল); ০০২ (মোবাইলওয়ান); ০০৮(স্টারহাব); উগান্ডা- ০০০ +; উজবেকিস্তান- ৮১০; সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস- ০১১; সেইন্ট ভিনসেন্ট- ০১১; সেন্ট লুসিয়া- ০১১; ক্যামেরুন- ০০৭ ০০১; ক্যাম্বোডিয়া- ০০৭ ০০১; আবখাযিয়া- ৮১০ +; অ্যাঙ্গুইলা- ০১১; কেম্যান আইল্যান্ড- ০১১; প্যারাগুয়ে- ০০২ +; ব্রাজিল- ০০১৪; গ্রানাডা- ০১১ +; ইন্দোনেশিয়া- ০০১ / ০০৭ / ০০৮; দক্ষিণ আফ্রিকা- ০৯; তানজানিয়া- ০০০, তাজিকিস্তান- ৮১০|
আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস এর মাধ্যমে এসএমএস পাঠানো
বিদেশে যাওয়ার পর কোন ব্যক্তি সেই দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশীয় সিম থেকে নিজ দেশে বা অন্যদেশে মেসেজ পাঠানোর জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রথমে লক্ষ্য রাখতে হবে যার ফোনে এসএমএসটি যাবে তার মোবাইল নম্বর অবশ্যই আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে হতে হবে। তাই, আন্তর্জাতিক অ্যাকসেস কোড +/০০, পরে কান্ট্রি কোড ও সর্বশেষ ব্যক্তির মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
গুগলে দ্রুত সঠিক তথ্য খুঁজে পাওয়ার কৌশল
ব্লুটুথ কি বা কাকে বলে? ব্লুটুথের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা
যেসব দেশের কান্ট্রি কোডের শেষে শূন্য রয়েছে ও মোবাইল ফোনের নাম্বার শূন্য দিয়ে শুরু হয়েছে, সেসকল দেশের জন্য কান্ট্রি কোডের শূন্যের পর মোবাইল ফোনের শূন্য দেয়া যাবে না।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের রবির কোন নাম্বারে এসএমএস পাঠাতে হলে, +৮৮০-এর পর মোবাইল ফোন নাম্বারের বাকি দশটি ডিজিট দিতে হবে।
এমনকি এসএমএস সেন্টারের নাম্বারও আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে সেইভ করতে হবে।
পরিশিষ্ট
দেশীয় মোবাইল সিম অন্যদেশে ব্যবহারের পূর্বে উপরের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। সদ্য দেশ থেকে বিদেশে যাওয়া মানুষের জন্য আর্থিক দিকটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিকল্পের দিকে লক্ষ্য দেওয়া উচিত। কেননা, উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করে যে, আন্তর্জাতিক রোমিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য সহজ ব্যবস্থা নয়। ঝামেলাহীন সেবা দিতে বাংলাদেশের টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির এখনো বেশ সময় লাগবে।
#####