বিশ্বের কোন দেশে ধর্ষণের কী শাস্তি | বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের শাস্তি

বিশ্বের কোন দেশে ধর্ষণের কী শাস্তি!

প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। সকালে খবরের কাগজ খোললেই চোখে পড়ছে ধর্ষণের খবর। এসব ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।জনমনে উঠছে প্রশ্ন, কেন বাড়ছে ধর্ষণের মতো পৈশাচিক অপরাধের ঘটনা? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের মতো পৈশাচিক অপরাধ বিবেচনায় শাস্তির বিধান কি কম? নাকি আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না? পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ অপনাধের শাস্তি কেমন?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে- আমাদের প্রতিবেশী দেশে ভারত, ইরান, রাশিয়া, চীন, গ্রিসসহ এশিয়া-ইউরোপের অনেক দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে এদিক থেকে ব্যতিক্রম যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়েসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ। তাদের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩০ বছর কারাদণ্ড।

পৃথিবীর কোন দেশে ধর্ষকদের কী ধরনের শাস্তি হয়

ভারত: আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। এদেশেও প্রতিদিন ঘটছে ধর্ষণের মতো নানা পৈশাচিক ঘটনা। এসব ঘটনায় বিচারও হচ্ছে কঠোর। তারপরেও কমছে না ধর্ষণ। ২০১৩ সালে ধর্ষণের শাস্তি আগের চেয়ে কঠোর করে দেশটির সরকার। ওই আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়। তবে, দেশটিতে এ অপরাধে সচরাচর ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

চীন: এশিয়ার বৃহৎ দেশ চীন। এ দেশে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষকের যৌনাঙ্গ কেটে দেওয়া হয়।

ইরান: এশিয়ার আরেক দেশ ইরানে ধর্ষণের শাস্তি অনেক কঠোর। এদেশে কোন লোক ধর্ষণ করলে সাধারণত জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে, ধর্ষিতার অনুমতি নিয়ে কোন ক্ষেত্রে ধর্ষককে জনসম্মুখে ১০০ দোররা বা চাবুক মারা হয়। তবে, আবারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গ্রিস: গ্রিসেও ধর্ষেণের শাস্তি বয়াবহ। দেশটিতে কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করার পর তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া, এ শাস্তি আগুনে পুড়িয়ে কার্যকর করা হয়।

মিসর: মিসরের কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করলে সেই ব্যক্তিকে জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মরা হয়।

উত্তর কোরিয়া: এদেশটিতেও ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।এ দেশের কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করলে তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

আফগানিস্তান: আফগানিস্তানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দেশটিতে কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করলে আদালতের রায়ের ৪ দিনের মধ্যে মাথায় গুলি করে রায় কার্যকর করা হয়।

সৌদি আরব: সৌদি আরবে ধর্ষণের কোন ঘটনা প্রমাণিত হলে জনসম্মুখে ধর্ষকের শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: সংযুক্ত আরব আমিরাতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দেশটিতে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালতের রায়ের সাত দিনের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাজা কার্যকর করা হয়।

ফ্রান্স: দেশটিতে ধর্ষণের শাস্তি একটু ভিন্ন। ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর ক্ষতটা ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে শাস্তি দেওয়া হয়। এ দেশে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩০ বছরের কারাদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড।

নেদারল্যান্ডস: এ দেশে ধর্ষণের শাস্তি তুলনামূলক অনেক কম। ভুক্তভোগীর ক্ষতি বিবেচনায় ৪ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে, দেশটিতে অনুমতি ছাড়া জোর করে চুম্বনও এ ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

রাশিয়া: বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র রাশিয়া। এ দেশের কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করলে তাকে ৩ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র: বিশ্বের শীর্ষ শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশে ধর্ষণের দুই ধরনের আইন প্রচলিত রয়েছে। দেশটির ফেডারেল আইনে এ অপনাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড । তবে একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম শাস্তি বলে জানা গেছে।

নরওয়ে: নরওয়ের কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করলে শাস্তি হিসাবে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইসরায়েল: ইসরায়েলে ধর্ষণের শাস্তি হিসাবে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 

বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের শাস্তি

বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের কি শাস্তি হবে তা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাদের দেশের আইনে ধর্ষণের শাস্তি-

১) যদি কোনো পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে ধর্ষক ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

ব্যাখ্যা: যদি কোনো পুরুষ ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সাথে বিবাহ বন্ধন ব্যতীত তার অনুমতি ছাড়া অথবা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

এছাড়া, যদি কোন পুরুষ ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সাথে তার অনুমতি বা অনুমতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

২) ধর্ষণের সময় কিংবা ধর্ষণের পরে এ কারণে কোন নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষিত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া, অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

৩) গণধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু বা আহত হলে এ কাজের সাথে সংশ্লিস্ট সকল ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া, অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

৪) যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ১০ বছরের কিন্তু অন্যুন ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া, অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

৫) যদি কোন নারী পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে সেসব ব্যক্তি ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তার প্রত্যেকে ওই নারীর হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া, অতিরিক্ত অন্যুন ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

আমাদের দেশে ধর্ষণের শাস্তি না হওয়ার বড় কারণ

আমাদের দেশে ধর্ষণের ঘটনা প্রমানে জটিলতা রয়েছে। যার কারণে অনেক প্রভাবশালী এ পৈশাচিক অপরাধ করার পরেও আইনের বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তাই, আমাদের দেশে সেসকল ধর্ষণের আইন রয়েছে সেগুলোকে আরও সময়োপযোগী করতে হবে।

ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করার পদ্ধতিতে নারী যেন ফের কোন নাজেহালের শিকার না হন, সেদিকে প্রশাসনের সুনজর দিতে হবে। ####

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button