সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?
সন্ধির প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ
সন্ধি
আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি? তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
সন্ধি কাকে বলে?
সন্ধি শব্দের অর্থ ‘মিলন’। দ্রুত উচ্চারণের ফলে পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের ফলে দুটি ধ্বনির মিলন, পরিবর্তন অথবা লোপ হতে পারে। ধ্বনির এরুপ মিলন, পরিবর্তন অথবা লোপ হওয়াকে সন্ধি বলে। এক কথায় বলা যায়, পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে।
উদাহরণ-
- ধ্বনির মিলন বা রূপান্তর: রবি + ইন্দ্র= রবীন্দ্র। এখানে রবি শব্দের শেষে ই-ধ্বনি ও ইন্দ্র শব্দের প্রথম ই-ধ্বনি মিলে ঈ-ধ্বনিতে রূপান্তর হয়েছে।
- ধ্বনি-লোপ: হিম + আলয়= হিমালয়। এখানে হিম শব্দের শেষের অ-ধ্বনি ও আলয় শব্দের প্রথম আ-ধ্বনি মিলিত হওয়ার কারণে অ-ধ্বনি লোপ পেয়েছে এবং আ-ধ্বনি পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়েছে।
- ধ্বনির বিকৃতি বা বদল বা পরিবর্তন: রাজ্ + নী= রাজ্ঞী। এখানে পরধ্বনি ন রূপান্তরিত হয়ে ঞ হয়েছে।
বৈয়াকরণগণ নানাভাবে সন্ধির সংজ্ঞার্থ দিয়েছেন। যেমন-
কেউ বলছেন, বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে।
আবার কেউ বলেছেন, একাধিক ধ্বনির মিলন, লোপ বা পরিবর্তনের নাম সন্ধি।
সন্ধির প্রয়োজনীয়তা কী?
- নতুন শব্দ গঠন করা।
- শব্দের আকার ছোট করা।
- দ্রুত উচ্চারণ করা যায়।
- উচ্চারণে সহজপ্রবণতা আনা।
- ধ্বনির মাধুর্য সম্পাদন ।
- ভাষাকে সংক্ষিপ্ত, সাবলীল ও শ্রুতিমধুর করা।
- ভাষার শব্দ ভান্ডার বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুন:
ভাষা কী? ভাষা প্রকাশের মাধ্যম কয়টি ও কী কী?
বর্ণ কি বা বর্ণ কাকে বলে? বর্ণ কত প্রকার ও কি কি?
বাক্য কাকে বলে? একটি সার্থক বাক্যের কী কী গুণ থাকা আবশ্যক?
সন্ধির প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ
সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?
সন্ধি প্রধানত ২ প্রকার। যথা-
- বাংলা সন্ধি।
- তৎসম সন্ধি।
বাংলা সন্ধি কাকে বলে?
বাংলা ভাষার সন্ধি খাঁটি বাংলা সন্ধি নামে পরিচিত। বাংলা ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট অনুয়ায়ী কিছু কিছু সন্ধি দেখা যায়, যা সংস্কৃত সন্ধির বৈশিষ্ট বা নিয়ম থেকে আলাদ। সংস্কৃত ছাড়া এসব সন্ধিকে বাংলা সন্ধি বা খাঁটি বাংলা সন্ধি বলে।
যেমন:
- ছেলে+আমি= ছেলেমি।
- নিন্দা + উক= নিন্দুক।
- মিতা+আলী= মিতালি ।
- এক+এক= একেক।
বাংলা সন্ধি আবার ২ প্রকার। যথা-
- স্বরসন্ধি।
- ব্যঞ্জনসন্ধি।
আরও পড়ুন:
উপসর্গের অর্থবাচকতা নাই; কিন্তু অর্থ দ্যোতকতা আছে
ব্যাকরণ কাকে বলে? ব্যাকরণের কার্যাবলি আলোচনা কর
স্বরসন্ধি কাকে বলে?
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিল‘নে যে সন্ধি গঠিত হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।
যেমন-
- ঘড়ি+ইয়াল= ঘড়িয়াল।
- বাবু+আনা=বাবুয়ানা।
- ঢাকা+ইশ্বরী= ঢাকেশ্বরী।
ব্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে?
স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর স্বরে অথবা ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে মিলিত হয়ে যে সন্ধি গঠিত হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।
যেমন-
- যত+দিন=যতদিন।
- কয়+এক=কয়েক।
- কাঁচা + কলা = কাঁচকলা।
ব্যঞ্জনসন্ধি আবার ২ প্রকার। যথা-
- অন্তঃসন্ধি।
- বহিঃসন্ধি।
তৎসম সন্ধি কাকে বলে?
বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এসব শব্দের দ্বারা কোনো সন্ধি হলে তাকে তৎসম শব্দ বলে।
যেমন-
- স্ব+অধীন= স্বাধীন।
- অতি+ইত= অতীত।
- মহা+ইন্দ্র= মহেন্দ্র।
- প্রতি+এক= প্রত্যেক।
তৎসম সন্ধি ৩ প্রকার। যথা-
- স্বরসন্ধি।
- ব্যঞ্জনসন্ধি।
- বিসর্গ সন্ধি।
স্বরসন্ধি কাকে বলে?
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিল‘নে যে সন্ধি গঠিত হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।
যেমন-
- নব+অন্ন= নবান্ন।
- সিংহ=আসন= সিংহাসন।
- মহা+আশয়= মহাশয়।
ব্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে?
স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর স্বরে অথ‘বা ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে মিলি‘ত হ‘য়ে যে সন্ধি গঠি‘ত হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।
যেমন-
- দিক্+অন্ত= দিগন্ত।
- প্র+ছদ= প্রচ্ছদ।
- সৎ+চরিত্র=সচ্চরিত্র।
ব্যঞ্জনসন্ধি তিন প্রকা‘র। যথা-
১) ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি।
২) স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি।
৩) ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি।
বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে?
পূর্ব পদের শে‘ষ ধ্বনি যদি বিসর্গ হয় এবং পরপদে‘র প্রথ‘ম ধ্বনি যদি ব্যঞ্জন বা স্বর হয়, তা‘হলে এ দুয়ের মধ্যে যে সন্ধি হ‘য় তা‘কে বিসর্গ সন্ধি বলে।
যেমন-
- অধঃ+গতি= অধোগতি।
- মনঃ+আশা=মন-আশা।
- অতঃ+এব= অতএব।
বিসর্গ সন্ধি আবা‘র ২ প্রকার। যথা-
- র জাত বিসর্গ।
- স জাত বিসর্গ।
র জাত বিসর্গ কাকে বলে?
র এর স্থা‘নে যে বিসর্গ হ‘য় তাকে র-জাত বিগ‘র্স বলে। যেমন- অন্তর-অন্তঃ, প্রাতর-প্রাতঃ।
স জাত বিসর্গ কাকে বলে?
স এর স্থানে যে বিসর্গ হ‘য় তাকে স -জাত বিগ‘র্স বলে। যেমন- নমস্-নমঃ, শিরস্-শিরঃ।
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি কাকে বলে?
যেসব ক্ষেত্রে সন্ধি নিয়‘ম অনুসা‘রে হয় না, তাকে নিপাত‘নে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন-
নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি
- মূলশব্দ—— সন্ধি-বিচ্ছেদ
- কুলটা= কুল + অটা।
- গবাক্ষ= গো + অক্ষ।
- অন্যান্য= অন্য + অন্য।
- স্বৈর= স্ব + ঈব্র।
- পৌঢ়= প্র + উঢ়।
- মার্তণ্ড= মার্ত + অণ্ড।
- বিম্বোষ্ঠ= বিশ্ব + ওষ্ঠ।
- শুদ্ধোদন= শুদ্ধ+ওদন।
নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জন সন্ধি
- মূলশব্দ—— সন্ধি-বিচ্ছেদ
- আশ্চর্য= আ + চর্য।
- একাদশ= এক + দশ।
- বৃহস্পতি= বৃহৎ + পতি।
- দ্যুলোক= দিব + লোক।
- মনীষা= মনস + ঈষা।
- গোস্পদ= গো + পদ।
- ষোড়শ= ষট + দশ।
- বনস্পতি= বন + পতি।
- পুরস্পর= পর + পর।
- পতঞ্জলি= পতৎ + অঞ্জলি।
- বিশ্বামিত্র= বিশ্ব + মিত্র ।
- স্কর= তদ্ + কর।
নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গ সন্ধি
- মূলশব্দ—— সন্ধি-বিচ্ছেদ
- অহরহ= অহঃ + অহ
- মনঃকষ্ট= মনঃ + কষ্ট।
- অহর্নিশ= অহঃ + নিশ।
- মনঃক্ষুন্ন= মনঃ + ক্ষুণ্ণ।
- প্রাতঃকাল= প্রাতঃ + কাল।
- দুঃস্বপ্ন= দুঃ + স্বপ্ন।
- দুঃশাসন= দুঃ + শাসন।
- শিরঃপীড়া= শিরঃ + পীড়া।
- অতঃপর= অতঃ + পর।
- নিঃসন্দেহ= নিঃ + সন্দেহ।
######